ঢাকা সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বিভাগসমূহ

সীমান্তের কান্নাকাটির সেই মিলনমেলাটি এবার হতে দিলেন না বিএসএফ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। || ৯:৩৭ অপরাহ্ণ ॥ মার্চ ১৯, ২০২৩

গঙ্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে প্রতিবছর মিলনমেলা হয়ে আসছে। এবারেও সীমান্তে সেই মিলন মেলা হওয়ার কথা, কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ অনুমতি না দেওয়ায় এবছর আর মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের ৯১৫ নম্বর মেইন পিলারের কাছে মালদহ নদীপাড়ে গত ৬০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গেল ৬০ বছরের এই প্রথম বিএসএফ মেলাটির অনুমতি দেয়নি।

রোববার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের ৯১৫ নম্বর মেইন পিলারের কাছে মালদহ নদীপাড়ে কয়েক হাজার বাংলাদেশি মিলনমেলার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সিতাই থানার ভেরভেরি এলাকায় কাটাতারের বেড়ার কাছে গঙ্গাপূজা হয়। পরে দর্শনার্থীরা মালদহ নদীতে পূণ্যস্নান করেন। এ পূজা উপলক্ষে মালদহ নদীপাড়ে বাংলাদেশ-ভারতের মানুষ মিলিত হয়ে মিলনমেলা করেন।

দীর্ঘদিন পর স্বজনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আবেগতাড়িত হয়ে সকলে একে অপরকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করেন বলে এ মেলাকে ‘কান্নাকাটির মেলা’ও বলা হয়ে থাকে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী গ্রামের আশি বছরের সুরেন চন্দ্র বর্মণ সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারতে থাকা তার দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে মেয়েদের সাথে দেখা না করেই ফিরে যেতে হলো। তার শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। দুই মেয়ে ভারতে থাকে। তাদের সঙ্গে ১০ বছর দেখা হয় না। আজ তাদের সঙ্গে সীমান্তের মেলায় দেখা করার কথা ছিল তার। কিন্তু বিএসএফ মেলার অনুমতি না দেওয়ায় মেয়েদের সঙ্গে দেখা হয়নি।’

স্থানীয় সুধীর চন্দ্র বর্মণ (৮০) বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে গঙ্গাপূজার এই মিলন মেলা হয়ে আসছে। এবছর প্রথমবারের মতো এ মেলা হতে দিলো না বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। কেন এ মেলার অনুমতি দিলো না সেটা বলতে পারছি না। এ বছর অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথাও হয়েছিল। তারাও সীমান্তে এসেছিল। সারাদিন অপেক্ষা করে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।

আদিতমারী উপজেলার বামনেরবাসা এলাকার যামিনীকান্ত রায় বলেন, ‘তারকাঁটার বেড়া আমাদের আলাদা করেছে। কিন্তু আমাদের প্রীতিবন্ধনকে আলাদা করতে পারেনি। আমরা আগের বছরগুলোতে সীমান্তের মিলনমেলায় এসেছিলাম এবং ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম।’

এবছর সীমান্তে মিলনমেলা হলো না! আমাদের পাসপোর্ট-ভিসা করার সামর্থ্য থাকলে এভাবে সীমান্তে মিলনমেলার জন্য অপেক্ষা করতাম না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বলেন, ‘এবছর সীমান্তে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করেছিলেন। বিএসএফ মেলার অনুমতি না দেওয়ায় দর্শনার্থীরা মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে গেছেন। মিলনমেলাটি “কান্নাকাটির মেলা” হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এই সীমান্তের একটি ঐতিহ্য। বিএসএফ কেন অনুমতি দেয়নি সেটা জানা যায়নি।’

Print Friendly, PDF & Email

সম্পাদক ও প্রকাশক

 

ওয়েবসাইট: www.prothomdesh.com

 

উপদেষ্টা সম্পাদক

%d bloggers like this: