ঢাকা সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

বিভাগসমূহ

লালমনিরহাটে কিশোর নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি সদস্য গ্রেফতার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। || ৩:১৪ অপরাহ্ণ ॥ এপ্রিল ৬, ২০২৩

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় চুরি অভিযোগ তুলে সোহান মিয়া (১৪) নামে এক কিশোরকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় ইউপি সদস্য সামছুল হককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ থানার ওসি এটিএম গোলাম রসূল। এর আগে ভোরে উপজেলার ভোটমারি ইউনিয়নের জামিরবাড়ি এলাকার তার বাড়ি থেকে ইউপি সদস্য সামছুল হককে আটক করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত সামছুল হক ভোটমারী ইউনিয়নের ৯ নং জামিরবাড়ি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

গত রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে আহত সোহান মিয়াকে সোহানকে পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে বাঁশ ডলা (দুই বাঁশ দিয়ে শরীর চেপে ধরা) দেয় নির্যাতনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা কেউ একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এখনো কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, সোহানের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ৫-৬ মাস বয়সী সোহানকে রেখে নিখোঁজ হন। এরপর তার বাবাও বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। পরে মামা আনিছার রহমান সোহানকে নিজের কাছে রাখেন। বর্তমানে সোহান কখনো গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করে কখনো বা ঘাস বিক্রি করে আয় করে। সম্প্রতি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিল সে। রোববার (২ এপ্রিল) গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল সোহান। ব্যাঙ্গেরহাট এলাকায় পৌঁছালে টিউবয়েলের একটি সকেট রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে হাতে নেয় সে। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল, ইসমাইলের ছেলে ওহাব মিয়া, সুভাসের ছেলে তাপস ও আজিজুলের ছেলে রানা মিয়াসহ কয়েকজন তাকে চোর সন্দেহে আটক করেন।

পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে সোহানকে রশিতে বেঁধে মারপিট করেন তারা। একপর্যেয় প্লায়ার্স দিয়ে তার শরীরের চামড়া টান দেন। সোহানকে বাঁশ ডলা (দুই বাঁশ দিয়ে শরীর চেপে ধরা) দেয় নির্যাতনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা কেউ একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এতে খবর পেয়ে কিশোর সোহানের মামা আনিছার রহমান ভোটমারী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত সোহানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে ভর্তি আহত সোহান মিয়া বলে, টিউবয়েলের একটি সকেট রাস্তায় পড়ে দেখে আমি হাতে তুলে নেই। ওই সময় আমাকে কয়েকজন চোর আখ্যা দিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মাছের প্রজেক্টে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে মারপিট করে। আমি চুরি করেনি, এ কথা বলার পরও হাত-পা বেঁধে প্লায়ার্স দিয়ে শরীরের চামড়া টেনেছে আমার। এমনকি হাতে পায়ে ধরলে ক্ষমা না করে বাঁশ রেখে ডলা দিয়েছে। আমার নানি ও মামা ছাড়া কেউ নেই। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই।

সোহানের মামা আনিছার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ব্যাঙ্গেরহাট এলাকার ইসমাইল হাজীর ছেলে ওহাব মিয়া, স্কুলশিক্ষক তাপস কুমার ও রানা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন মিলে একটি মাছের ঘেরে নিয়ে আমার ভাগ্নের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। ভোরে আসামী ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জানতে পেরেছি। পুলিশকে ধন্যবাদ। তবে আরো বাকি আসামীদের গ্রেফতার করার দাবি জানাই।

কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম গোলাম রসুল জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে ইউপি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতার করতে মাঠে পুলিশ কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

সম্পাদক ও প্রকাশক

 

ওয়েবসাইট: www.prothomdesh.com

 

উপদেষ্টা সম্পাদক

%d bloggers like this: