লেখক-গবেষক ড. গোলাম মুরশিদ আর নেই

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, গবেষক, আভিধানিক, অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ মারা গেছেন। লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

গোলাম মুরশিদের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজা হিলালী। অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে গোলাম মুরশিদ বেশ কিছুদিন হলো অসুস্থ ছিলেন। ২২ আগস্ট বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে লন্ডনের সাউথএন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে কুইন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গোলাম মুরশিদের স্ত্রী এলিজা মুরশিদ। এই দম্পতির দুই সন্তান। ছেলে পাণিনি মুরশিদ যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। মেয়ে বিপাশা গার্গী মুরশিদ লন্ডনপ্রবাসী। পরিবারের বরাতে মাহফুজা হিলালী জানান, গোলাম মুরশিদের মরদেহ ছেলে লন্ডনে পৌঁছানোর পর সেখানেই সমাহিত করা হবে।

গোলাম মুরশিদ ১৯৪০ সালের ৮ এপ্রিল বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।

প্রায় দুই দশক তিনি অধ্যাপনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন লন্ডনের বিবিসি বাংলা বিভাগে। এ ছাড়া ১৯৯১ সাল থেকে লন্ডনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর জীবন ও জগৎ প্রসারিত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ।

গোলাম মুরশিদ বাংলাসাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজ বিষয়ে ৩০টিরও বেশি বই লিখেছেন। প্রাবন্ধিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অগ্রগন্য। ‘আশার ছলনে ভুলি’, ‘কালান্তরে বাংলা গদ্য’, ‘রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া : নারীপ্রগতির একশো বছর’, ‘সমাজ সংস্কার আন্দোলন ও বাংলা নাটক’, ‘রবীন্দ্রবিশ্বে পূর্ববঙ্গ পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা’, ‘হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

সৃজনশীল ও গবেষণামূলক কাজের জন্য গোলাম মুরশিদ ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০২১ সালে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *