কলম্বিয়াকে হারিয়ে রেকর্ড শিরোপা জয় আর্জেন্টিনার

কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপার ফাইনালে ১৬তম শিরোপা ঘরে তুলেছে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয়েছে গোল শূন্য সমতায়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে অতিরিক্ত সময়ের ২২ মিনিট গড়িয়েছে। টাইব্রেকার আসন্ন। এই অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের গোলে শিরোপা নির্ধারণ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার।

এরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটলো; কলম্বিয়ার জাল কাঁপলো, লাওতারো সাইডলাইন টপকে দর্শকের সঙ্গে মিশে গিয়ে আবার ফিরে এলেন, লিওনেল মেসি গর্জে উঠলেন, ইনজুরির বিষাদ উড়িয়ে দিয়ে হাসলেন, হার্ড রক স্টেডিয়ামে খেলে গেল আকাশী নীল-সাদা ঢেউ। আর্জেন্টিনা পেল ষোড়শ কোপা আমেরিকার শিরোপার স্বাদ।

ঠিক এমনই নাটকীয় ছিল কোপা আমেরিকার ফাইনালের মহামঞ্চ। কেন ফাইনালকে মহামঞ্চ বলা হয়, সেটা আরেকবার দেখা গেল। উত্তেজনা, উন্মাদনা আর উদ্দীপনা ছড়ানো ম্যাচে লাওতারোর গোলে কলম্বিয়াকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে কোপার রেকর্ড ষোড়শ শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে টপকে গেল উরুগুয়েকে। এককভাবে দখল করলো শীর্ষস্থান।

আজ সোমবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে শুরু হওয়া ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার থেকে এগিয়ে ছিল কলম্বিয়া। তারা নিজেদের কাছে বল রেখেছে ৫৬ শতাংশ। আর্জেন্টিনা রেখেছে ৪৪ শতাংশ। আক্রমণের দিক থেকে আর্জেন্টিনা ৬টি শট লক্ষ্যে রেখে ১ গোল আদায় করে নেয়। কলম্বিয়ার ৪ শটে কোনো গোল হয়নি।

ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণ করে বসে আর্জেন্টিনা। তবে কাজে লাগাতে পারেননি জুলিয়ান আলভারেজ। প্রথম মিনিটেই গনজালো মন্টিয়েল ক্রস করে পাস বাড়িয়েছিলেন কলম্বিয়ার গোলপোস্টের দিকে। তবে পা ছুঁয়েও দিক ঠিক রাখতে পারেননি আলভারেজ।

পঞ্চম মিনিটে আক্রমণে ওঠেন কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজ। তার শট ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ত্রয়োদশ মিনিটে কর্নার থেকে উড়িয়ে দেওয়া জেমস রদ্রিগেজের বলে আরেকটা সেভ করেন মার্টিনেজ। ২৫তম মিনিটে কলম্বিয়ার আরেকটি আক্রমণ বাধা পায় আর্জেন্টিনার ডিফেন্সে। এর দুই মিনিট বাদেই মারাত্মক এক ফাউলের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন জন করডোবা। ২৭তম মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে পা ছোঁয়াতে গিয়ে লিসান্দ্রোকে ইচ্ছাকৃত ফাউল করে বসেন করডোবা। দেরি না করে হলুদ কার্ড দেখিয়ে তাকে সর্তক করে দেন রেফারি।

কলম্বিয়া মোক্ষম সুযোগটি পেয়েছিল ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে। জেফারসন লার্মার জোরালো গতির শট পোস্টের একেবারে কিনারা ঘেষে জাল খুঁজেই নিচ্ছিলো, ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে রক্ষা করেন মার্টিনেজ। এক মিনিট পর আবারও সুযোগ মিস করে কলম্বিয়া। ৪১তম মিনিটে আবারও কলম্বিয়ার আক্রমণ এবং মার্টিনেজের আরেকটি সেভ। ৪৪তম মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক থেকে লাফিয়ে উঠেও হেডে লাগাল পাননি নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। এর খানিক বাদেই প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি। ফলে কোনো গোল ছাড়াই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতির পর মাঠে নেমেই ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ম্যাক অ্যালিস্টারের পাস থেকে তার নেওয়া শট ফিরিয়ে দেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক। ৫৮তম মিনিটে তাকে আরেকবার হতাশ করেন কলম্বিয়ার প্রহরী। ডি-বক্সের ভেতর থেকে মাটি কামড়ানো বাঁক খাওয়ানো শট নিয়েছিলেন বিদায়ী কিংবদন্তি। দুর্দান্ত এক সেভে দলকে রক্ষা করেন ভার্গাস।

আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মাঝেই আগের ইনজুরির জের ধরে ৬৯ মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিকে। সেই সঙ্গে নিজের শেষ কোপাও খেলে ফেললেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। মাঠ ছেড়ে ডাগআউটে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি। অধিনায়ক চলে যাওয়ার পরই কেমন যেন খানিকটা এলোমেলো ফুটবল উপহার দেয় লিওনেল স্কালোনির দল।

এর মধ্যে ৭৫তম মিনিটে গোল পেয়েই গিয়েছিলেন নিকোলাস গঞ্জালেস। তবে তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকায় আর গোল পাওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার। বাকি সময়ে দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করেও আর এগিয়ে যেতে পারেনি। তাতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়েও দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে। তাতে দলের মধ্যে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে ১০৫ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। আলভারেজের জায়গায় বদলি হিসেবে নামান লাউতারো মার্টিনেজকে। সাত মিনিট পরই আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করে দলকে উল্লাসে ভাসান লাওতারো। সেই সঙ্গে মেসির মুখে এনে দেন হাসি।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *