টি-টোয়ন্টি ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

সাতমাস আগেই ভারত নিজেদের মাটিতে হেরেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। এবার আর তাদের কাদতে হয়নি। দক্ষিন আফ্রিকাকে শেষ ওভারে হারিয়ে ১৩ বছর পর শিরোপা নিজেদের করে নিলো ভারত।

ক্রিকেট ইতিহাসে দক্ষিন আফ্রিকার প্রথম শিরোপা জয় ছিল আজ খুবই কাছে। কিন্তু আজ চোকার্স দুর্নাম ঘুচিয়ে টি-টোয়ন্টি ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে পারলো না দেশটি। চোকিং কথাটি থেকে বের হয়ে ঘোচাতে পারলো না চোকার্স দুর্নাম। শনিবার (২৯ জুন, ২০২৪) রাতে বার্বাডোজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের কাছে ৭ রানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করেছে তারা। হাতছাড়া করেছে ইতিহাস গড়ার সুযোগ, ভারতের চোখের জলে প্রোটিয়া ফুল ফোটানোর।

অন্যদিকে ১৭ বছর পর ভারত পেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ। ২০০৭ সালে মাহেন্দ্র সিং ধোনি নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শিরোপা জিতেছিল মেন ইন ব্লুরা। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আরও একটি শিরোপা শোকেসে তুললো তারা। রাহুল দ্রাবিড় বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে প্রধান কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর মতো অমূল্য মর্যাদা অর্জন করলেন।

বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। যা ছিল ২০১২ সালের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে কোনো অধিনায়কের টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার ঘটনা। বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে চারের পর চার মেরে সূচনাটা দারুণ করেছিল ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে দলীয় রান যখন ২৩ তখন কেশব মহারাজ জোড়া উইকেট তুলে নেন রোহিত (৪) ও ঋষভ পন্তকে (০) ফিরিয়ে। ৩৪ রানের সময় সূর্যকুমার যাদব (৩) রাবাদার শিকার হয়ে ফিরলে মনে হচ্ছিল রোহিতের ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত বুঝি মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে।

কিন্তু সেটি ভুল প্রমাণ করেন কোহলি ও পদোন্নতি পেয়ে ব্যাটিংয়ে নামা অক্ষর প্যাটেল। পুরো বিশ্বকাপে ফ্লপ যাওয়া কোহলি যেন তার সেরা ইনিংসটা তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। ফাইনালের মঞ্চে হাসলো তার ব্যাট। সঙ্গে অক্ষর দেখালেন তার ব্যাটিং ঝলক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা দুজন ৭২ রান সংগ্রহ করে ভারতের লড়াকু পুঁজির ভিত গড়ে দেন।

১০৬ রানের মাথায় অক্ষর রান আউট হয়ে ফিরলে ভাঙে এই বিপদজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি। তিনি ৩১ বল ১টি চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে যান। এরপর কোহলি শিবম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন আরও ৫৭ রান। এ যাত্রায় তিনি ৪৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩৯তম ফিফটি তুলে নেন। ১৯তম ওভারে জানসেনের বলে আউট হলে থামে কোহলি ঝড়। ৫৯ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে যান সাবেক অধিনায়ক। এরপর দুবের ২৭ রানের ইনিংসে ভর করে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে।

বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যানরিখ নরকিয়া ছিলেন সেরা। তিনি ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে মহারাজও নেন ২টি উইকেট। রান তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ রানে প্রথম ও ১২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। প্রথমে বুমরাহর বলে বোল্ড হন রেজা হেনড্রিকস (৪)। এরপর আরশদীপের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম (৪)।

সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন কুইন্টন ডি কক ও ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলের প্রয়োজনীয় রান রেট ঠিক রাখেন। দলকে রাখেন লড়াইয়ে। ৭০ রানের মাথায় স্টাবস ফিরেন অক্ষরের বলে বোল্ড হয়ে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। এরপর ডি কক ও হেনরিখ ক্লাসেন চতুর্থ উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন আরও ৩৬ রান। ১০৬ রানের মাথায় ডি কক ফিরেন ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস খেলে। তার উইকেটটিও নেন আরশদীপ।

পঞ্চম উইকেটে মিলার ও ক্লাসেন মাত্র ২২ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়ে ভারতের হাত থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন প্রায়। ক্লাসেনের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান গিয়ে দাঁড়ায় ১৫১ তে। জিততে ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৬ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট। একেবারে সহজ সমীকরণ। তখন মনে হচ্ছিল ভারতের চোখের জলে বুঝি ফুটতে যাচ্ছে প্রথম প্রোটিয়া ফুল।

কিন্তু ২৩ বলে ২টি চার ও ৫ ছক্কায় ফিফটি করা ক্লাসেন ব্যক্তিগত ৫১ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হলে ফিরলে নাটকীয়ভাবে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। এরপর ১৫৬ রানে মার্কো জানসেন (২) ও ২০তম ওভারের প্রথম বলে ১৬১ রানের সময় ডেভিড মিলার (২১) আউট হলে জয়ের বন্দর থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ভারত ৭ রানের জয়ে ঘরে তোলে শিরোপা।

বল হাতে ভারতের হার্দিক ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। আরশদীপ ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। আর জাসপ্রিত বুমরাহ ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ব্যাট হাতে অবদান রাখা অক্ষর অবশ্য আজ ছিলেন বেশ ব্যয়বহুল। ৪ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নেন ১টি উইকেট। তাই তাকে পেছনে ফেলে ফাইনালে ম্যাচসেরা হন কোহলি। আর সব মিলিয়ে ১৫ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন বুমরাহ।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *