কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে ভারত বাংলাদেশ ছিট মহল বিনিময় চুক্তির আলোকে সাবেক ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ায় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে ৮ম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। ৩১ (জুলাই) সোমবার দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে এই বর্ষপূর্তি পালিত হয়।
১৯৭৪ সালে ১৬ মে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় চুক্তির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে ছিটমহলগুলোর বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর একেবারে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেই চুক্তি। পরবর্তিতে দেশের সরকার ও ক্ষমতার পালাবদল রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে এ চুক্তি বাস্তবায়ন অসমাপ্ত রয়ে যায়। আঁধার নেমে আসে দুই দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলবাসীর ভাগ্যে দীর্ঘ ৬৮ বছর কারাবন্দী জীবন যাপন করতে হয়। ছিটমহলবাসীদের পরিচয় দেওয়ার মতো কোন কিছুই ছিলনা। দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে ছিলনা শিক্ষা,চিকিৎসা রাস্তাঘাট,বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা এমন কি বাহিরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে নিজের পরিচয় টুকু গোপন করতে হয়েছে। সেখানকার ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশের আত্নীয় স্বজনদের পরিচয় ব্যবহার করতে হতো।দুই দেশের সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন ছিটমহল বাসিন্দারা সবমিলিয়ে অন্ধকার কারাবন্দী জীবন যাপন করতে হতো।
৬৮ বছর পর ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলবাসীর অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন।সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জন্য শেখ হাসিনা পিতা মুজিবের করা ৭৪এর চুক্তি বাস্তবায়ন কল্পে আবারও দুই দেশের মধ্যে জোড়ালো ভাবে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৩১জুলাই মধ্যে রাতে ৭৪এর চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।দুই দেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকা১১১টি ছিটমহলের চুক্তি বাস্তবায়ন করে ছিটমহলবাসীর মুক্তির ঠিকানার বাস্তবায়ন করেন।
ঐতিহাসিক ওই দিনটিকে চিরস্বরণীয় করে রাখতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া বাসী প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৩১জুলাই ১২টা এক মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার ৮ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করেন।বাংলাদেশ ও ভারত সাবেক ছিট মহল বিনিময় আন্দোলনের দাসিয়ার ছড়া ইউনিটের সভাপতি মোঃ আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে, দাসিয়ার ছড়া কালির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মোমবাতি প্রজ্বলন,কেক কাটা ও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক এমপি বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব জাফর আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সহসভাপতি আবু সাঈদ লোবান, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান শেখ,সহ সভাপতি শাহাজাহান আলী বাদশা, সাধারণ সম্পাদক জননেতা আহাম্মদ আলী পোদ্দার রতন,যুগ্ন সাধারন সম্পাদক দেলোত্তয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুবক্কর সিদ্দিক মিলন,যুগ্ন সাধারন সম্পাদক উত্তম কুমার মোহন্ত, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তমাল সহ আরো অনেকে।
মোমবাতি প্রজ্বলন ও কেক কাটা শেষে প্রধানমন্ত্রী সহ তার পরিবারের ও দেশের শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।