নড়াইল পৌরসভার কবরস্থান সংস্কার নিয়ে চলছে তেলেছমাতি কারবার। রীতিমত সাধারণ মানুষ উন্নয়ন ও সংস্কার নিয়ে দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ বুঝে পক্ষ নিয়েছেন,কেউবা না বুঝে পক্ষ নিয়েছেন। সংস্কার প্রকল্পের কোন কিছু না জেনেই বেশির ভাগ মানুষ হুজুগে কোন এক পক্ষে যোগ দিয়ে লম্ফ ঝম্ফ দিচ্ছেন। বাস্তব অবস্থা না বুঝেই আবার অনেকে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ একেক সময় একেক কথা বলছেন। একবার বলছেন মেয়র আঞ্জুমান আরা যা করছেন সবঠিক আছে, ভালো কাজ করছেন। আবার বলছেন,মেয়র যা করছেন,তা ঠিক নয়। আবার কেউ কেউ পরিবেশ বুঝে কথা বলছেন,যেখানে যে দলের প্রভাব দেখছেন সেখানে সেই দলের পক্ষে কথা বলছেন। এমন অনেককেই দেখা গেছে মেয়রের কাছে গিয়ে বলছেন, পৌরকবরস্থান সংস্কার কাজ চালিয়ে যান। এ ব্যাপারে কোন আপোষ নয়। ভালো কাজ করছেন,চালিয়ে যান। সেই ব্যক্তি আবার পৌর কবরস্থান সংস্কার বিরোধিদের কাছে গিয়ে বলছেন, কোন ভাবেই এ কাজ করতে দেয়া যাবে না। কাজটা মেয়র মোটেও ভালো করছেন না।
এর মধ্যে আরেকটা গ্রæপ আছেন,যারা কেবল সুবিধাই ভোগ করতে চান। তারা মেয়র আঞ্জুমান আরা’র কাছে গিয়ে তার লোক সেজে সুবিধা নিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারাই আবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস এর নিকট গিয়ে তার লোক সেজে তার নিকট হতে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। মুলত: এরা ধান্দাবাজ। জেলা পরিষদ ও পৌরসভার মধ্যে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ শুরু হলে এ চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পায়তারা করছে। আরেকটি চক্র আছে তারা দু’গ্রæপের মধ্যে দ্ব›দ্ব সংঘাত সৃষ্টি করে নড়াইলকে অশান্ত করতে চায়। এরা আসলে কারো ভালো চায় না। এ ধরনের নানামুখি চক্র ও ধান্দাবাজদের কুপরামর্শ ও দোলাচলে নড়াইলে অশান্তির ছায়া নেমে এসেছে। ফলশ্রæতিতে নড়াইল পৌরসভার অধিনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প থমকে গেছে। কে কখন কোন গ্রæপে বা কার পক্ষে কাজ করছেন, তা বোঝার কোন উপায় নেই। চরম বিশৃংখল পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে।
গত ২১ মে নড়াইল পৌর কবরস্থান সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ কাজ শুরু হলে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই কবর’র বাউন্ডারি ভাঙ্গার কারণে ক্ষুব্ধ হন। আবার অনেকে এ কাজ সমর্থন করে বলেন,ইসলামী কবর পাকা করা নিষিদ্ধ। তাই পাকা বাউন্ডারি ভেঙ্গে দেয়া উচিৎ। আবার কেউ কেউ মন্তব্য করেন পৌর কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত ফিস দিয়ে কবর পাকা করা হয়েছে। সেই পাকা বাউন্ডারি ভাঙ্গার কোন অধিকার পৌর কর্তৃপক্ষ রাখে না। আবার অনেকে পৌর কবরস্থানে গিয়ে স্বজনের কবরের পাকা বাউন্ডারি ভাঙ্গা দেখে ডুকরে কেদে উঠেন। অনেকে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন,সামনের ওপর স্বজনের কবরের পাকা বাউন্ডারি ভাঙ্গা মেনে নিতে পারেননি। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। কবর সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে দু’টি গ্রæপ নিজ নিজ পক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন চলতে থাকে যার যার গন্ডিতে। এর বাইরে সুবিধাবাদ চক্র নিজেদের স্বার্থ সুবিধা পেতে যেখানে যা বলার তাই বলতে আছেন।
অথচ পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা কয়েক দফা পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক করেন জেলার শীর্ষ আলেম ওলামাদের নিয়ে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে কবরের পাকা বাউন্ডারি ভেঙ্গে সুন্দর করে কবরস্থান সংস্কার কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক পৌর কবরস্থান সংস্কার কাজ শুরু হয়। এ কাজ শুরুর পর দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ধর্মীয় ও মানবিক আবেগ অনুভুতির ব্যাপার,তাই এ বিষয়ে কেউ শক্ত অবস্থানে যেতে পারছেন না। নিতে পারছেন না কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সাধারণ মানুষের মুখের দিকে চেয়ে তাদের খুশি করার জন্য যা বলার তাই বলছেন। নিজের কোন অভিমত পরিস্কার করে ব্যক্ত করতে পারছেন না বর্ষিযান কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধি। জনগন খুশি করা কথা বলায়, পরিস্থিতি আরোও জটিল হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ২৪ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর কবরস্থানের পাশে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাতের অন্ধকারে বুল ডোজার দিয়ে পৌর কবরস্থান ও কবর ভেঙ্গে দেয়ার প্রতিবাদে এ নাগরিক সমাবেশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪মে) বিকেলে নাগরিক সমাজের আয়োজনে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট হেমায়েতুল্লাহ হিরু এর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন,এ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন,ঠিকাদার রেজাউল আলম,নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর কাজী জহিরুল হক প্রমুখ। অধিকাংশ বক্তা জনগনকে সাথে নিয়ে ভালো কাজ করার কথা বলেন। আপাতত: কবরস্থানের সংস্কার কাজ বন্ধ রাখার জন্য মেয়রকে অনুরোধ করার কথা বলেন অধিকাংশ বক্তা। এর মধ্যে একটা কমিটি করে ওই কমিটি এ বিষয়ে করণীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সে বিষয়ে পৌরসভা মেয়র আঞ্জুমান আরা’র সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
সভাশেষে সংস্কার কাজ বন্ধ হচ্ছে এমন কথা প্রচার করে একটি চক্র বেশ উল্লাস প্রকাশ করে। আবার অনেকে সংস্কার কাজ বন্ধের কথায় মুখ গোমরা করে চলে যান।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা কিছু করা হচ্ছে পৌরবাসির সুবিধার জন্য করা হচ্ছে। পৌরবাসি না চাইলে পৌর কবরস্থান সংস্কার বা উন্নয়ন কাজ করা হবে না। আর যদি পৌরবাসি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চান তা-হলে কাজ করা হবে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছিল। বিশেষ আলেম-ওলামা ও বিশিষ্ট জনদের মতামত নিয়ে কা করা হচ্ছিল। কাজ চলাকালে অনেকে আপত্তি করেছেন,তাই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা নিজেই হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন বা যা বলবেন তাই করা হবে।