পাইকগাছায় মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পাইকগাছা পৌরসভা সদরে অবস্থিত মধুমিতা পার্কের অবৈধ স্থাপনা দীর্ঘ আইনী লড়াই শেষে ১৮ বছর পর উচ্চ আদালতের আদেশে উচ্ছেদ করেছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার দুপুর থেকে খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আল-আমিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম মাহমুদুর রহমান, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ফায়ার সার্ভিস অফিসের ষ্টেশন অফিসার আবুল কালাম মোড়লসহ থানা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রীট মামলা নং ৩৫৯০/২০০৫ ও কন্টেম পিটিশন নং ১০২/২২ মোতাবেক শনিবার দুপুরে আদালতের আদেশ কার্যকর করা হয়। এসময় ৩০ টি পাকা ব্যবস্য প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়।
উল্লেখ্য খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মধুমিতা পার্ক। যা জনৈক মাদার মন্ডল তার স্বত্ব দখলীয় বাতিখালি মৌজার সাবেক ৯১ খতিয়ানের ১৭১,১৭২ দাগের ১.০৭ একর জমি ভারত সরকারের নামে দান করেন। দানীয় জমিতে পুকুর খননের মাধ্যমে এলাকার মানুষের মিষ্টি পানির অভাব দূর হতে থাকে। ঐ পুকুরের পানি মিষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজন পুকুরটির নাম দেন মিষ্টি পুকুর। এরপর ১৯৮০ সালে তৎকালিন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টি পানির পুকুরটির সংরক্ষনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মান করেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম পুকুরটির প্রাচীরের মধ্যে চলাচলের জন্য চারিপাশে রাস্তা নির্মাণ করেন এবং লোকজনের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, পাকা ঘাট সহ চারিপাশে বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রোপনের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এরপর স্থানটির নাম হয় মধুমিতা পার্ক। যা উদ্বোধন করেন তৎকালিন খুলনার জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম। ঐ সময় থেকে একমাত্র চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে মধুমিতা পার্ক এবং পার্কের অভ্যন্তরে থাকা মিষ্টি পানির পুকুরটি এলাকার পানির অভাব দূরীকরনের একমাত্র আধার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এ অবস্থায় মধুমিতা পার্ক ও মিষ্টি পুকুরের উপর কু-নজর পড়ে একশ্রেণীর প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের। তারা খুলনা জেলা পরিষদের কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ করে পার্কের প্রাচীর ও রাস্তা ভেঙ্গে পাকা দোকানঘর নির্মান করেন। তখন সচেতন মহল মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন সহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কটি সংরক্ষনের জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। ব্যর্থ হয়ে সহকারি জজ আদালত পাইকগাছায় অবৈধ বন্দোবস্ত ও দখলকারিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা করেন ও নিষেধাজ্ঞা পান। অপরদিকে পাইকগাছার অবৈধ দখলকাররা তা অমান্য করে দোকানঘর নির্মান করে ব্যবসা করতে থাকেন। পরবর্তীতে পার্ক সংরক্ষন কমিটি তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পীকারের শরনাপন্ন হন এবং তার পরামর্শে বিগত ২০০৫ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নং- ৩৫৯০/০৫। মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি অন্তে বিগত ২০০৫ সালের ২৪মে মধুমিতা পার্কের অভ্যন্তরে অবৈধ নির্মান কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন। সরকারি কর্মকর্তা এবং অবৈধ দখলদাররা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অবৈধ স্থাপনা রেখে কেউ কেউ নিজে দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছেন। আবার কেউ কেউ অগ্রীম মোটা অংকের টাকা ভাড়া নিয়ে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে তাদের অবৈধ স্থাপনাসহ দখল বজায় রাখেন। উক্ত বিষয় উল্লেখ করে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটি মহামান্য হাইকোর্টে কোর্ট অব কন্টেম পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ১০২/২২। উক্ত পিটিশন কয়েক দফায় শুনানীঅন্তে গত ১৩ মার্চ’ ২৩ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট মামলার বিবাদিদেরকে আগামী ২০ দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জ্যৈষ্ঠ আইনজীবি এড. জি এ সবুর এবং পার্ক সংরক্ষন কমিটির সভাপতি ও পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. এফ এম এ রাজ্জাক জানান সর্বশেষ মহামান্য হাইকোর্টেও নির্দেশে গত ১৫ মে খুলনা জেলা পরিষদ থেকে পাইকগাছা পৌর মেয়র কে চিঠি দিয়ে পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক শনিবার দুপুরে পার্কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ বিষয়ে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জ্যৈষ্ঠ আইনজীবি এড. জি এ সবুর এবং পার্ক সংরক্ষন কমিটির সভাপতি ও পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. এফ এম এ রাজ্জাক বলেন, দেরীতে হলেও পার্কের জায়গা দখল মুক্ত হওয়ায় তারা খুশি।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *