মাতৃহীন শর্মিষ্ঠা সাহার মায়ের মৃত্যুর পর মাসির কাছে বড় হয়। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ঘটা করে তার বিয়েও হয়। বিয়ের দুই বছর না পেরোতেই মাতৃহীন শর্মিষ্ঠা সাহা সাধের সংসার ছাড়া হয়েছেন! স্বামী ও শশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারে তিনি সংসার ছাড়া হয়েছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অশ্লীল ছবি, খারাপ কথা ও ধর্ম বিরোধী পোষ্ট দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী স্বামী। এই হুমকির বিষয়ে শর্মিষ্ঠা সাহা তার স্বামীর বিরুদ্ধে বাগেরহাটের চিতলমারী থানায় জিডি করেন। আদালতে মামলা করায় বাগেরহাট আদালত চত্বর এলাকায় স্বামী ও তার লোকেরা মারপিট করেছে। তবু বিচারের আশায় প্রাণভয় নিয়ে তিনি এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
মঙ্গলবার (০২ মে, ২০২৩) কান্নাজড়িত কন্ঠে শর্মিষ্ঠা সাহা বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ের কুফল আমি ভোগ করছি।’ তিনি জানান, বাপের সংসারে তিনিই একমাত্র সন্তান। মা বেঁচে না থাকায় ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর না পেরোতেই তার স্বামী শংকর বিয়ের সময়ের উপহার স্বর্ণালংকার বিভিন্ন জিনিস আত্মসাৎ করে। এরপর তার বাবার বাড়ি হতে আরো টাকা আনতে বলে। তা না আনায় স্বামী, শশুর-শাশুড়ি, দেবরেরা কুৎসা রটিয়ে, অত্যাচার চালিয়ে বাপের বাড়ি এগিয়ে দিয়ে যায়। এরপর আর খোঁজ নেয়না। এসব ব্যাপারে শংকরদের বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের দুইটি মামলা হয়। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে লোকজন নিয়ে একাধিকবার বাধা দিয়েছে। মামলা হতে রেহাই পাওয়ার জন্য সম্প্রতি শংকর কৌশলে তার ফেসবুক আইডি (ঝযড়ৎসর ঝধযধ) হ্যাক করে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই বিষয়ে শর্মিষ্ঠা সাহা ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ চিতলমারী থানায় জিডি করেন। জিডি নং-১২৬৫। শর্মিষ্ঠা জানান, বিয়ের সময় শংকর সাহাকে উপহার দেয়া স্বর্ণালংকারসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল আত্মসাত করতে তার উপর নির্যাতন চালায়। এই অবস্থায় কলেজ ছাত্রী শর্মিষ্ঠা সাহার লেখাপড়া বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জানা যায়, ২০২০ সালে চিতলমারী সদর বাজারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাধন সাহার মেয়ে শর্মিষ্ঠা সাহার সাথে বাগেরহাট সদরের বাসাবাটি সাহাপাড়ার সহাদেব কুমার সাহার ছেলে শংকর সাহার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়েতে মেয়ে-জামাইকে কয়েক লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র সহ নানা জিনিস উপহার দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর শংকর সাহা ও তার পরিবার কৌশলে শর্মিষ্ঠাকে বাবার বাড়িতে এগিয়ে দিয়ে আর নিতে চায় না। এক পর্যায়ে শর্মিষ্ঠা সাহা গত ০১ জানুয়ারী, ২০২৩ সালে যৌতুক নিরোধ আইনে বাগেরহাট আদালতে মামলা করেন। এই মামলায় শর্মিষ্ঠা সাহার স্বামী শংকর সাহা গত ২৭ ফেব্রæয়ারী, ২০২৩ আদালতে হাজির হয়ে আপোষ-মিমাংসার কথা বলেন। মিমাংসার শর্তে জামিন নিয়ে শংকর সাহা তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠার হাত ধরে নিয়ে আদালতের কক্ষ হতে বেরিয়ে আইনজীবী ঝর্ণা রানী হালদারের চেম্বারে। সেখানে নিয়ে শংকর ও তার পরিবারের লোকেরা নানা বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে শর্মিষ্ঠাকে পেটায়। শর্মিষ্ঠার চিৎকার শুনে অন্যান্য আইনজীবীরা এসে তাকে রক্ষা করে। এই বিষয়ে গত ০১ মার্চ, ২০২৩ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শর্মিষ্ঠা সাহা আরো একটি মামলা করেন।
চিতলমারী থানার পরিদর্শক (ওসি) এএইচএম কামরুজ্জামান খান জানান, শংকর সাহা তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নানা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে থানায় রবিবার জিডি হয়েছে। তদন্ত করে দেখা হবে। স্বামীর সাথে শর্মিষ্ঠার বনিবনা না হওয়ায় আদালতে মামলা চলছে।
এ ব্যাপারে শংকর সাহা দাবী করেন, তার স্ত্রীর ফেসবুক আইডি তিনি হ্যাক করে কোন হুমকি দেননি। বাগেরহাট আদালত চত্বর এলাকায় বসে শর্মিষ্ঠাকে মারধরও করেননি। তৃতীয় পক্ষ তাদের সংসার ভেঙ্গে দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে।