বাংলা নববর্ষে পঞ্চগড়ে হলোনা দু’বাংলার নাগরিকদের মিলনমেলা

পহেলা বৈশাখ। এদিনটির জন্য ৩৬৫ দিন ধরে অপেক্ষায় থাকে বাংলাদেশ ও ভারতের হাজারও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল নাগরিক। প্রতিবছর এ দিনটিতে আপনজনদের সাথে মোলাকাত করতে সকাল থেকে হাজির হতে থাকেন উভয় দেশের নারী-পুরুষ-শিশুরা। উৎসবের ঢল নামে পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের অমরখানা ও বোদাপাড়া গ্রাম এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জের ভোলাপাড়ায় কাটাতারের বেড়ার দু’পাশে। ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব পিলার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ড জুড়ে উভয় দেশের নাগরিকদের মিলনমেলা শুরু হত। সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মিলনমেলা চলত বিকেল অব্দি। সর্বশেষ এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। এরপর থেকে কোভিড-১৯ এবং বিএসএফ’র অনাগ্রহে মিলনমেলা বন্ধ রয়েছে। এবার মিলনমেলা করার জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএসএফসহ মেলার আয়োজক, জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশকে নিয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে বিএসএফ’র অনুমতি না মেলায় এবারও বিফলে যায় সব উদ্যোগ বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
স্থানীয়রা জানান, পাক-ভারত বিভক্তির আগে বর্তমান পঞ্চগড় জেলা ছিল ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। ৪৭’এ পাক-ভারত বিভক্তির পর সীমান্তবর্তী এ দেশের অনেকের আত্মীয়-স্বজন ভারতীয় অংশে থেকে যায়। ৭০ দশকেও উভয় দেশের লোকজন প্রায় বিনা বাধায় যাতায়াত করতে পারলেও ৮০’র দশকে তা থেমে যায়। এছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় যাতায়াত একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অর্থের অভাবে পাসপোর্ট ও ভিসা করতে অসমর্থ হওয়ায় অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সে কারণে নববর্ষের এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে উভয় দেশে বসবাসকারী লোকজনকে। দেখা সাক্ষাতের সময় প্রিয়জন ও আত্মীয় স্বজনদের সামর্থ অনুযায়ী উপহার সামগ্রী তুলে দেয় একে অপরকে।
এবারও পহেলা বৈশাখ শুক্রবার সকাল থেকে পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে লোকজন আসতে শুরু করে অমরখানা সীমান্তের দিকে। তবে বিজিবি’র বাধায় তারা সীমান্তের কাছে যেতেও পারেনি। বিজিবি’র পক্ষ থেকে তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয় বিএসএফ অনুমতি না দেয়ায় এবারও মিলনমেলা হচ্ছে না। অনেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে শেষতক বাড়ি ফিরতে শুরু করে। পঞ্চগড় সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানপাড়া গ্রামের কুলেন চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে অমরখানা সীমান্তে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হত। এছাড়া হাড়িভাসা ইউনিয়নের বড়দরগায় ওরষের সময়ও তাদের সাথে সাক্ষাতে কথা বার্তা হত। বিনিময় হত খাদ্য সামগ্রী ও কাপড় চোপড়। আমরা ভেবেছিলাম করোনার কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর এবার হয়তো মিলনমেলা হবে। এ জন্য সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে অমরখানায় এসেছি। এখানে এসে শুনলাম এবারও মিলনমেলা হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *