মিষ্টি কুমড়ার ফলনই ভাগ্য ফিরিয়ে দিচ্ছে লালমনিরহাটের তিস্তার বালুচরের চাষিদের। তিস্তার বালুচরের চাষিরা এবার বিভিন্ন সবজিসহ মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক ফলন পেয়েছেন। তিস্তা বালুচরের এই মিষ্টি কুমড়া যেন কৃষকের কাছে সোনার হরিণের মতো। জমি থেকেই প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বালুচরের এই মিষ্টি কুমড়া চাষ করে অধিক লাভবান হবেন তিস্তায় সর্বস্ব হারানো চাষিরা।
জানা যায়, তিস্তা আর ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে প্রায় অর্ধশত চর। বর্ষাকালে নদীতে পানি থাকলেও হেমন্তকালে পানি শুকিয়ে চর জেগে উঠে। আর সময় এইসব এলাকার মানুষদের নদী ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। এতে ফসল ও বসতভিটার ব্যাপক ক্ষতি হয়। কৃষকরা জেগে উঠা বালুচরে বিভিন্ন সবজিসহ ফসল ফলান। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় ফসল ফলানো কষ্টসাধ্য হলেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। সাধারনত কৃষকরা চরের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ করেন। তবে চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এই ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের।
চরাঞ্চলের চাষিদের মতে, অন্যস্থান থেকে আনা পলিমাটি এনে বালুচরে গর্ত করে সেখানে পূরণ এবং সেই সাথে জৈব সারের মিশ্রন দেওয়া হয়। আর এতে ৩-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল ফল আসতে শুরু করে। চরে মিষ্টি কুমড়া চাষে মাচা দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে প্রায় ৮-১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটির ওজন ৩-৪ কেজি হয়। আর জমি থেকেই ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারা যায়।
তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি মজিবর রহমান বলেন, চরে মিষ্টি কুমড়া চাষে কোন মাচা দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। যদি আগাম বন্যা না হয় তাহলে আশা করি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবো।
তিস্তায় সব হারানো সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, আমার নিজের কোনো জমি নেই। তিস্তার পেটে আমি আমার সব জমি হারিয়েছি। সংসার চালাতে চাষাবাদের বিকল্প কিছু নেই আমার। তাই চরে ১ হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপন করেছি। বর্তমানে ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়া বড় হতে শুরু করেছে। চাষে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজার ভাল হলে আশা করছি এবার ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারবো।
একই এলাকার কৃষক আবু বকর বলেন, নদীতে ভাঙনে আমার সব জমি চলে গেছে। চরের বালু জমিতে গর্ত খুড়ে ৫০০ মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছি। দূর থেকে পাইপে টেনে পানি সেচ দিতে হয়। আমার প্রতিটি গাছে ৭-৮টি করে কুমড়া এসেছে। আশা করছি কুমড়া বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান জানান, গত দুই বছর থেকে তিস্তার চরে কৃষকরা খিরা, তরমুজ, বাদামসহ সব ধরনের ফসলই চাষ করছেন ফলনও ভাল হচ্ছে। তবে মিষ্টি কুমড়ার ফলন অন্যান্য ফসলের খুবই ভাল। বর্তমান সরকার কৃষকদের পাশে থাকায় কৃষকরাও চরাঞ্চলে এসব ফসল আবাদ করতে আগ্রহ পাচ্ছে। সরকার থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা যখন উৎপাদিত পন্যের দাম বেশি পান পরবর্তিতে অন্যান্য কৃষকরাও এসব ফসল আবাদ করতে আগ্রহী হন।