ফুলবাড়িতে গবাদিপশুর পরিবর্তে অটোরিক্সা দিয়ে টানছে তৈলের ঘানি
উত্তম কুমার মোহন্ত, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: || ৬:৪৭ অপরাহ্ণ ॥ মার্চ ২১, ২০২৩
বহুকাল ধরে গ্রাম বাংলার প্রচলন গরু দিয়ে ঘানি টেনে তৈল মারাইয়ের কাজ করত। কিন্তূ কালের পরিবর্তন আধুনিকতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বিলিন হয়ে গেছে গ্রামীণ জনজীবনের।যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে শহর,নগর গ্রামের হয়েছে নানা পরিবর্তন।হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্যকে পিছনে ঠেলে দিয়ে মানুষ এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় যান্ত্রিক সভ্যতায় মিশে যাচ্ছে।শুধু শহরের মানুষরা যন্ত্র নির্ভর করছে তা নয় দেখে দেখে গ্রামের মানুষরাও তাদের জীবনে যন্ত্র দিয়ে আমূল পরিবর্তন এনেছে।নানা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামের মানুষ অল্প ব্যায়ে অধিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন বুনছেন। আমাদের গ্রামীণ জীবনের শত বছরের ঐতিহ্য গরু দিয়ে ঘানি টেনে তেল মারাইয়ের কাজ। গবাদিপশু দিয়ে ঘানি টানতে যেমন সময় বেশি লাগতো এবং গরুর অনেক কষ্টও হতো।
এইসব কথা চিন্তা করে কম সময়ে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রামরাম সেন আরাজি নেওয়াশী গ্রামের সামসুল হক ও মুকুল মন্ডল মাত্র ৬০হাজার টাকা ব্যয়ে অটোরিক্সা দিয়ে তেলের ঘানি টানার পদ্ধতি তৈরি করেন। এতে ব্যবহার করেছেন অটো রিকশার ফ্রেম চাকা,ব্যাটারি,ও মোটর।সব যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি তেলের ঘানি টানার দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় করছেন তাদের ঘানিতে।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাম রাম সেন ও শিমুলতলা বাজার সংলগ্ন আরাজি নেওয়াশী এলাকার তৈল ব্যবসায়ী মুকুল মন্ডল,শামছুল হক জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বাপ দাদার তেলের ঘানি গরু দিয়ে টেনে আসছি কিন্তু বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অটোরিক্সা দিয়ে তেলের ঘানি টানার কাজ করছি বর্তমানে বাজারে দেশী সরিষা প্রতি মন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।প্রতি ঘানিতে ১০কেজি সরিষার থেকে ৩ লিটার তৈল উৎপাদন হতো। আগে তিন লিটার তৈল গরুর ঘানিতে উৎপাদন করতে সময় লাগতো ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। এখন অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে ৩ লিটার তৈল উৎপাদন করতে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে ২ ঘন্টা। এ পদ্ধতির ব্যবহার করে একদিকে যেমন শারিরীক পরিশ্রম কমে এসেছে তেমনি তৈল উৎপাদনের সময় কমে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে প্রতিদিন ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১০ থেকে ১১ লিটার তৈল উৎপাদন করা যায়।প্রতি লিটার তৈল খুচরা বিক্রি করি সাড়ে ৩শ টাকা। এতে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৮-৯ শ টাকা আয় হয়।
তৈল ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা জানান,জহির উদ্দিন,খালেক ও মালেক জানান, দীর্ঘদিন আমরা গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানা দেখেছি, অটোরিকশা দিয়ে তেলের খানি টানা দেখে খুবই ভালো লাগছে, তবে আমরা এখান থেকে পরিচ্ছন্ন ও একদম পরিষ্কার তৈল পাচ্ছি এবং বাড়ির পাশে হাতের নাগালেই তৈল কিনতে পারছি। এইজন্য খুব ভালোই লাগছে।