নীলফামারীতে নিজ যোগতা ও মেধায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ১২০ টাকা ব্যয়ে চাকুরী পেয়েছেন ৬৯ জন নারী পুরুষ। এ উপলক্ষে ২০ মার্চ সোমবার সকালে জেলা পুলিশ লাইন্স হলরুমে জেলা পুলিশের পক্প্রেষ থেকে প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বলেন, ‘স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৬৯ জন নারী ও পুরুষকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত মেধাবীরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।’
তিনি আরও বলেন,সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই নীলফামারী পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মোঃ শাহ আলম বলেন,আমার বাড়ী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নে। যখন আমি প্রথম শ্রেনীতে পড়ি আমাদের ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায় আমার পিতা বাহার উদ্দিন। তারপর থেকে তিনি আমাদের খোঁজও নেয়নি । আমার মা মানুষের বাড়ীতে কাজ করে আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে অনেক দুঃখে কষ্টে বড় করে তোলেন। আমার মা শাহেলা বেগম।
ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে দুই ভাই পরিক্ষা দিয়েছি নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি আমি। আমার ছোট ভাই পায়নি।
কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বৈশাখী দাস। বাড়ী নীলফামারী সদর উপজেলার হাড়োয়া এলাকায়। তার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। করতে পারে না চলাফেরা। তার অসুস্থতার পর মা গৌরি দাস অনেক জায়গায় ছোটাছুটি করেও পান নি সংসার চালানোর মতে কোন চাকরি। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে মেয়ে বৈশাখী দাসকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন। পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে আবেদন করে বৈশাখী দাস। চুড়ান্ত পরীক্ষা উত্তির্ন হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন ভাবতে পারেনি তার মা গৌরি দাস। এখন তাদের সংসার স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে এতে খুশী তার মা ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য ও রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোছাঃ সুলতানা রাজিয়া, পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) কনক কুমার দাস, নীলফামারী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) আমিরুল ইসলাম, সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোআর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ২ হাজার ৪১৫জন। এর মধ্যে উপস্থিত ২ হাজার ১৭৬ জন। চাকরী প্রত্যাশীদের মধ্যে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পান ৬৯ জন। যার মধ্যে রয়েছে ৫৯ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী।’
নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগই হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কৃষক, অটোচালক, রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, শ্রমিক, দর্জি পরিবারের সন্তান। যাদের চাকরির জন্য টাকা দেয়ার সামর্থ যেমন নেই, তেমনি সুপারিশেরও নেই কোনো লোক। মেধা ও শারীরিক পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা।
পুলিশ জানায়,‘ নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষক পরিবারের ৩৭ জন, চাকুরীজীবী পরিবারের ১৩ জন ও শ্রমিক পরিবারে ১৯ জন রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ কোটায় সাধারন ৪২ জন, আনসার কোটায় ১ জন, পোষ্য কোটায় ৬ জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১০ জনসহ ৫৯ জন এবং নারী কোটায় সাধারন ৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১ জন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় ১ জনসহ ১০ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পুলিশ সুপার ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাদেরকে।