সৈয়দপুরে পাথরবিহীন রেলপথ,নিত্যদিন ট্রেন চলে ঝুঁকি নিয়ে

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন। এ স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন চলাচল করে দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে। সম্প্রতি ভারত থেকে ট্রেন যোগে নিয়ে আসা হয় মোটা ও চিকন পাথর। ঠিকাদার ওই পাথর নিয়ে আসেন ভারত থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে। এখান থেকে ওই ঠিকাদার তার আমদানি করা পাথর ট্রাকে করে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন স্থানে। পাথর নিয়ে যাওয়ার সময় ঠিকাদারের লোকজন রেল লাইনে ব্যবহৃত পাথর এবং রেল লাইনের প্রায় এক ফিট মাটিও নিয়ে যান। ফলে রেল লাইন পাথর ও মাটি বিহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নিত্যদিন বেশ কয়েকটি ট্রেন ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। রেল স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিন পাশে রেললাইনের প্রায় ৫শ গজের মধ্যে পাথর নেই। সাথে রেল লাইনে মাটি না থাকায় তা শুরঙ্গে পরিনত হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষের যেন কোন মাথা ব্যথা নেই। দ্রুত সময়ে রেললাইন মেরামত করা না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
এদিকে লুপলাইনগুলো মালবাহী ট্রেন অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যার কারণে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটে ভারত থেকে পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে করে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রেলওয়ের সৈয়দপুর প্রকৌশল (পথ) বিভাগ সূত্র জানায়, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের মোট ৫৪ কিলোমিটার সৈয়দপুর প্রকৌশল বিভাগের অধীনে রয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দপুর অংশের ৭ কিলোমিটারের ৫শ গজ লাইন জরাজীর্ণ।
এ রেলপথেই বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রুটে নিত্যদিন ৫ টি আন্তঃনগর একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে।
দেখা গেছে, স্টেশন সংলগ্ন রেলক্রসিং থেকে দক্ষিণে হাতিখানা রেলওয়ে ব্রীজ ও উত্তরে গোলাহাট কবরস্থান রেলওয়ে ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রেল সড়কে নামেমাত্র পাথর রয়েছে। লাইনের নাট-বল্টু, হুক ও স্লিপার মাটিতে ঢেকে গেছে। লুপলাইনগুলোর চিত্র আরো করুণ। কাঠের স্লিপারগুলোর অবস্থাও বেশ নাজুক। কোথাও ধরেছে পঁচন। স্লিপার আটকানোর ক্লিপ উধাও হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় নাট-বল্টু কিংবা রেললাইনেরই অস্তিত্ব নেই । খানিক গতি নিয়ে ট্রেন চললে জয়েন্ট পয়েন্টগুলো ফাঁক হয়ে যায়। এসব লাইন মেরামত না করায় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সৈয়দপুর রেল লাইনের দুপাশের ব্যবসায়িরা জানান, ট্রেন আসার সময় হলে আমাদের ছুটাছুটি শুরু হয়। তার ওপর ট্রেন চলা চলের সময় মনে হয় বগি খুলে পড়ছে। লাইনগুলো হচ্ছে যেন আঁকাবাঁকা।

সৈয়দপুর থেকে ঢাকা রুটে নিয়মিত ট্রেনযাত্রী ডালিম বলেন, নিরাপদ ভেবে ট্রেনেই আমি যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু রেললাইনে পাথর না থাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার আশংকা কাজ করে।
এক আমদানিকারক বলেন, লুপলাইনগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এখানে মালবাহী ট্রেন প্রায় লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। লাইনগুলো ওয়াগন প্রবেশের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাই পাথর আমদানি করতে পারছি না।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল হক রতন জানান, সৈয়দপুর অংশে রেললাইন ঘেষে গড়ে ওঠেছে বাজার ও বসতি। তাই রেললাইনে পাথর থাকে না। তাছাড়া দীর্ঘদন ধরে রেললাইনে পাথর না দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে টেন্ডার হয়েছে কাজ শুরু হবে

সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা জানান, রেলওয়ে বিভাগ লাইনগুলো সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ে লাইনগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। যেসব স্থানে পাথর নেই সেসব স্থানেও পাথর দেয়া হবে।
মজার ব্যাপার হল সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল হক ও উপসহকারী প্রকৌশলী পথ সুলতান মৃধা রেললাইনের বেহাল অবস্থার দায়ভার নিতে নারাজ। তারা রেললাইনের করুণ অবস্থার দায়ভার একে অপরের ওপর চাপালেন। তবে উভয়ে জানালেন কাজ শুরু হবে দ্রুত সময়ে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *