আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি পিঠা-পুলির আয়োজন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন এই উৎসবের ধারাকে অব্যাহত রাখতে শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আজ আয়োজন করে বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসব। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপি অনু্ষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব ও বসন্তবরণ অনুষ্ঠান। বসন্তবরণ উপলক্ষ্যে অনু্ষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পিঠা উৎসবে শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের আয়োজনে নানান রকম পিঠার সমাহারে সজ্জিত ছিল স্টলগুলো। উক্ত উৎসবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পিঠা উৎসবে উপস্হিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক মো. জহির আলী, সিনিয়র শিক্ষক কামাল উদ্দিন, সিনিয়র শিক্ষক মিজানুর রহমানসহ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা বৃন্দ। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক, দর্শনার্থী, আমন্ত্রিত অতিথিদের ঢল নেমেছিল এ উৎসবে। বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে পিঠা বিক্রির ধুম ছিল লক্ষ্যনীয়। স্কুলের ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমন্ত্রিত অতিথি, দর্শনার্থীদের পদভারে স্কুল ক্যাম্পাস ছিল উৎসবের আমেজে মুখরিত। আর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল সেলফি তোলার ধুম।
বেলুন, ফ্যাস্টুন, বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো স্কুল ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবের আমেজ। এরি মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান আগতদের বিমোহিত করে রাখে।
গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর বা সন্ধ্যায় গাঁয়ের বধূরা চুলার পাশে বসে ব্যস্ত সময় কাটায় পিঠা তৈরিতে। অতিথি বিশেষ করে জামাই ও আত্নীয়-স্বজনদের এ সময় দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। এ সময় খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়।
বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের খাবার হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসাবে বাঙালি সমাজে আদৃত। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি। বাংলাদেশে শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে।
কালের গভীরে কিছু হারিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ইদানীং শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার স্বাদ।
পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। আমাদের গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। পিঠা-পার্বণের এ আনন্দ ও ঐতিহ্য যুগ যুগ টিকে থাকবে বাংলার ঘরে ঘরে।