তেঁতুলিয়ায় পাথরখেকোদের থাবায় বিলীন হচ্ছে আবাদী জমি ও চা বাগান

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নদীর নাম চুয়ামতি। কয়েক দশক আগেও এই নদীকে ঘিরে কর্মমূখর ছিল কয়েকটি গ্রাম। কিন্তু পাথরখেকোদের কড়াল গ্রাসে এখন জীর্ণ শীর্ণ ছোট এই নদীটি। যত্রতত্র বড় বড় গর্ত করে পাথর তোলায় পানি প্রবাহ কমে সৃষ্টি হয়েছে চর। আর বর্ষায় ওপার থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীটি গতিপথ হারিয়ে ভাঙছে আবাদী জমি ও চা বাগান। হারিয়ে যাচ্ছে জীব বৈচিত্র্য। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। নদীটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে শীঘ্র এই নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তের এই নদীতে চলছে পাথর তোলার মহোৎসব। ১০-১৫ জনের একটি দল করে নদীর বিভিন্ন জায়গায় গর্ত করে চলছে পাথর তোলার কাজ। নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে চা বাগান আর আবাদী জমি। ওপারেও সীমান্ত ঘেষে রয়েছে ভারতের চা বাগান। বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের দেখলেই লুকিয়ে থাকে পাথর শ্রমিকরা। তারা চলে গেলে আবার নদীতে নেমে পাথর তোলার কাজ শুরু করে শ্রমিকরা। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। দীর্ঘদিন ধরে চুয়ামতি নদীতে বিশাল গর্ত করে অবাধে পাথর উত্তোলন করায় নদীর প্রশস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। দুর থেকে পানি প্রবাহ চোখে না পড়লেও দেখা যাবে শুধু বালু চর। আবার বর্ষায় প্রবল পানির তোড়ে নদীটি গতিপথ হারিয়ে নষ্ট করছে কৃষকের আবাদি জমি ও চা বাগান।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় এসব নদীতে পানি প্রবাহ বেশি থাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। নদী পাড়ের অনেক মানুষ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু অবাধে পাথর উত্তোলন করায় এই নদীটি এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। পাথরখেকোরা শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরী দিয়ে ফায়দা লুটছেন। এ কারণে পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমনি নদী তার গতিপথ হারিয়ে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পাথর লোভীরা কোন কিছু তোয়াক্কা না করে পাথর উত্তোলন করেই যাচ্ছে। ফলে দিন দিন নদী তার প্রবাহমান গতিপথ পাল্টে ভিন্ন দিকে ঘুরে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, এই নদী থেকে পাথর উত্তোলনে শেল্টার দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। আমরা দৈনিক হাজিরাতে নদীতে পাথর তোলার কাজ করি। অন্য কোন কাজ না থাকায় সারাদিন পাথর তুলে পাই ৩শ থেকে ৪শ টাকা। তাদের হাত অনেক লম্বা। আপনারা তাদের বিরুদ্ধে লিখে কিছু করতে পারবেন না। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সীমান্ত নদী থেকে পাথর উত্তোলন করছি। যে কোন সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহার সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা ভজনপুরের ডাহুক নদীতে অভিযান চালিয়েছি। জেল জরিমানা করেছি। চুয়ামতি নদীতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর আমাদের এ অভিযান আরো বেগবান করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *