আজ থেকে ১৫ বছর আগেও পঞ্চগড়ে প্রায় সব নদীতে শুস্ক মৌসূমেও অনেক পানি থাকত। আর এসব নদীর পানি ব্যবহার করে নদী পাড়ের কৃষকরা রবি মৌসূমে বোরো ধান, গম, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, বেগুনসহ নানান ধরণের সবজি আবাদ করত।
কৃষকদের জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করেছিল লো লিফট পাম্প বা এলএলপি। এই পাম্পের মাধ্যমে নদীর পানি উত্তোলন করে দীর্ঘ ক্যানেলের মাধ্যমে কৃষকদের জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হত। কৃষকদের এজন্য যৎসামান্য অর্থ দিতে হত। অধিক ফলন ফলিয়ে লাভবান হত কৃষকরা। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার সকল লো লিফট পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে দুইটি বোদা উপজেলায় ও একটি দেবীগঞ্জে।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী ইউনিয়নে রয়েছে দুইটি লো লিফট আহমদনগর-২ ও আহমদনগর-৩ নামে দুইটি এলএলপি সেচ প্রকল্প। করতোয়া নদীতে পাম্প বসিয়ে কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের ২২০ হেক্টর বা এক হাজার ৬৪৩ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এই দুইটি সেচ প্রকল্প চলছে কৃষক পানি ব্যবস্থাপনা দলের মাধ্যমে। এরই মধ্যে কৃষকদের আশা জাগিয়েছে এই দুইটি সেচ প্রকল্প। সরজমিন দেখা গেছে, বেংহারী ইউনিয়নের আহমদনগর, ফুলতলাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। যাতায়াত আর কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকট ছিল তাদের প্রধান সমস্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের সেচের পানি পেয়ে খুশি কৃষকরা। প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। দেখা যায়, নদীর উভয় পাড়ে আলু, সরিষা, শিম, পিঁয়াজ, বেগুনসহ নানান ধরনের সবজির ক্ষেত।এই অবকাঠামোর মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে এই অঞ্চলে কৃষি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দুইটি সেচ প্রকল্পের প্রতিটিতে ১১০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। যার সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। এলাকায় এলএলপি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদান করছে। অনেক সময় বর্ষাতেও বৃষ্টিপাত কম হলে যখন আমন ধান চাষ ব্যহত হয় তখন এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয় কৃষকরা।
ওই এলাকার ফুলতলা গ্রামের কৃষক ফয়জুল ইসলাম বলেন, শুস্ক মৌসূমে আমাদের কৃষিকাজে প্রধান সমস্যা ছিল সেচ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আর লোডসেডিং এর কারণে আমরা কৃষিকাজে খুব সমস্যায় পড়তাম। উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যেত। এখন আমরা আহমদনগর সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে কম খরচে কৃষিকাজ করতে পারছি। আমিও কৃষক পানি ব্যবস্থাপনা দলের সদস্য। চলতি মৌসূমে আমি এক একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। এই প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে আমার খরচ অনেক কম হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও এর উপ প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রফিউল বারী জানান, নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে আগের মত ব্যাপকভাবে আমরা সেচ সুবিধা দিতে পারছি না। তবে কিছু এলাকায় নদীতে পানি থাকায় আমরা এলএলপি সেচ প্রকল্প অব্যাহত রেখেছি। সেচ সুবিধাভোগীদের নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা দলের মাধ্যমে এই সেচ প্রকল্পগুলো চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা খুব কম খরচে জমিতে সেচ দিতে পারছে। এতে করে তারা অধিক লাভবান হচ্ছে। #